মামুনুর রশিদ একজন প্রভাবশালী ভূমি দখলকারী এবং চোরাচালানের প্রধান হিসেবে পরিচিত। উত্তরা ও আশপাশের এলাকাগুলোতে তার প্রভাবশালী অবস্থানকে ব্যবহার করে তিনি অবৈধ জমি দখল, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন। এখানে তার কার্যকলাপের কিছু বিস্তারিত দিক তুলে ধরা হলো:
ভূমি দখল কার্যক্রম
মামুনুর রশিদ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে ভূমি দখলের বাণিজ্য পরিচালনা করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি উত্তরা এলাকার বিভিন্ন প্লট মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমি দখল করেন এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলেন। বিশেষ করে, তিনি ঢাকা উত্তরা ১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে জমি দখলের জন্য বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করেন।

দখল প্রক্রিয়ার কৌশল
- মামুনুর রশিদ সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে জমির মালিকদের সাথে জমি কেনার জন্য চুক্তি করেন এবং ছোট অঙ্কের বায়না প্রদান করেন। পরবর্তীতে, পুরো অর্থ পরিশোধের কথা থাকলেও, তা আর দেন না এবং জমি দখলে রাখেন।
- জমির মালিকদের মধ্যে যারা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বা তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন, তাদের তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুরিয়ে রাখেন এবং কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া না করেই জমির উপর দখল বজায় রাখেন।
কিশোর গ্যাং ও সহযোগীরা
মামুনুর রশিদের ভূমি দখল কার্যক্রমে সহায়ক হিসেবে স্থানীয় কিশোর গ্যাং, বিশেষ করে বাঁধন হাসান ওরফে বাঁধন খান, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাঁধন কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে মামুনুর রশিদের জমি দখল প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে। বাঁধনের নেতৃত্বে তার দল জমি দখলের জন্য প্রয়োজনীয় চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।

মাদক ব্যবসা
মামুনুর রশিদের অবৈধ কার্যক্রমে মাদক ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উত্তরায় তিনি গাঁজা, ফেন্সিডিল এবং ইয়াবার মতো মাদক দ্রব্যের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তার এই মাদক ব্যবসা স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রসার ঘটাচ্ছে এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
সোনা চোরাচালান কার্যক্রম
মামুনুর রশিদ উত্তরার সোনা চোরাচালানের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সোনা চোরাচালানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং চাকরি হারানোর পরও এ কাজে সক্রিয় রয়েছেন। তার বিভিন্ন দোকান ও সহযোগীদের মাধ্যমে তিনি চোরাই সোনা উত্তোলন এবং সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গোল্ডেন মনিরের সাথে যোগসূত্র
গোল্ডেন মনিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মামুনুর রশিদ পরিচিত। তার সাথে সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে মামুনুর রশিদ উত্তরা এবং আশপাশের এলাকায় অপরাধমূলক প্রভাব বিস্তার করেছেন। এই যোগসূত্রের মাধ্যমে তিনি উত্তরা এলাকায় অবৈধ চোরাচালানের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির প্রভাব
মামুনুর রশিদ স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের উপর ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভুয়া প্রমাণ বা দলিল তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করেন এবং তার কিশোর গ্যাং ও সহযোগীদের সহায়তায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ
উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন আবাসিক প্লট অবৈধভাবে দখল করে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করেছেন। এসব স্থানে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং চোরাই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি এলাকার পরিবেশ ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করছেন। এ ছাড়া, তিনি এবং তার সহযোগীরা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে স্থানীয় মানুষদের জন্য একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছেন।
চোরাই তেল ব্যবসা
উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে মামুনুর রশিদের কিশোর গ্যাং সদস্যরা চোরাই তেল ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই কার্যকলাপে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং অবৈধ তেল ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে।
প্রশাসনের দুর্বলতা ও আইন প্রয়োগে জটিলতা
মামুনুর রশিদের এইসব অবৈধ কার্যকলাপ স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাবশালী পরিচিতি ও রাজনৈতিক সহযোগীদের কারণে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন, ফলে তিনি তার অবৈধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।
মামুনুর রশিদ এবং তার দলের এই কার্যক্রমগুলি একটি বড় সামাজিক এবং আইনগত সমস্যা তৈরি করছে, যা স্থানীয় প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।